সালেহ্ বিপ্লব, মনিরুল ইসলাম: [৩] জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের তিনদিনের সফরে দিল্লি রয়েছেন। এরই মধ্যে মঙ্গলবার দুপুরে গণমাধ্যমে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ নিজেকে দলের চেয়ারম্যান ঘোষণা করেন। 

[৪] তার স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়ে, আমি বেগম রওশন এরশাদ, এমপি জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা কো-চেয়ারম্যান, এই মর্মে ঘোষণা করছি যে, পার্টির সিনিয়র নেতাদের পরামর্শ ও সিদ্ধান্তক্রমে দলের গতিশীলতা বজায় রাখার স্বার্থে দলের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব গ্রহণ করলাম।

[৫] রওশন সমর্থকরা এও জানান, মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি, নানা ধরনের মামলা-মোকদ্দমা এবং দল পরিচালনায় অযোগ্যতা ও অসাংগঠনিক আচরণের কারণে জাতীয় পার্টির বর্তমান চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদেরকে চেয়ারম্যান পদ থেকেও তারা অব্যাহতি দিয়েছেন। দলের সিনিয়র নেতারা রওশন এরশাদকে চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার এই লিখিত প্রস্তাবে সই করেছেন।

[৬] রওশন এরশাদের দায়িত্বগ্রহণের খবর ছড়িয়ে পড়তেই চেয়ারম্যানের প্রেস সেক্রেটারি খন্দকার দেলোয়ার জালালী প্রেরিত এক বিবৃতিতে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমে একটি নিউজ এসেছে, যে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপিকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। এটি একটি ফেক নিউজ। জাতীয় পার্টির যে কয়জন কো-চেয়ারম্যানের নাম ব্যবহার করে নিউজটি করা হয়েছে, তাদের প্রত্যেকের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তারা জানিয়েছেন, তারা এমন কোন সিদ্ধান্তে সহায়তা করেননি এবং স্বাক্ষর করেননি। 

[৭] তিনি বলেন, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী যে কেউ ইচ্ছে করলেই চেয়ারম্যানকে অব্যাহতি দিতে পারেন না। জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীরা গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপির নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ আছেন। 

[৮] জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, আমি কখনও রওশন এরশাদকে দলের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নিতে অনুরোধ করিনি। এক বছর, দুই বছর আগের কোনো স্বাক্ষরকে কেন্দ্র করে এই ধরনের বিভ্রান্তি ছড়ানোর সুযোগ নেই। 

[৯] রওশনের পক্ষে স্বাক্ষরের ব্যাপারে মহাসচিব চুন্নু বলেন, যাদের স্বাক্ষর করার কথা বলা হচ্ছে, তাদের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। তারা বলছে, তাদেরকে ব্লাকমেইল করা হয়েছে। কোনো সভায় তাকে চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নিতে অনুরোধ তারা করেনি।

[১০] দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি এক ভিডিও বার্তায় বলেন, গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ উদ্ভট বানোয়াট ও মিথ্যা। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের আছেন, থাকবেন। 

[১১] এ বিষয়ে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় হোয়াটসঅ্যাপে কল করা হলে

রওশন এরশাদ আমাদের নতুন সময়কে বলেন, আমাকে চেয়ারম্যান করার যে চিঠি প্রকাশিত হয়েছে তা আমি অবগত নই। এটা স্রেফ একটি প্রপাগান্ডা। জাতীয় পার্টিকে নিয়ে একটি মহল বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। 

[১২] তিনি চিঠির বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, আমি আসলেই কিছু জানি না। একটি মহল জাতীয় পার্টিকে দুর্বল করতেই এসব ছড়াচ্ছে।

[১৩] নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন নেতা বলেন, প্রধানমন্ত্রী ১৯ আগস্ট গণভবনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। এরপর তিনি আগামী নির্বাচনে জাতীয় পার্টির অংশগ্রহণের ঘোষণা দেন। আর তারপর মঙ্গলবার প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হলো, যাতে রওশন এরশাদ নিজেকে চেয়ারম্যান নিজেকে চেয়ারম্যান ঘোষণা করলেন। পুরো ব্যাপারটাইতে মনে হতে পারে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে রওশন এরশাদ এটা করেছেন। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাতীয় পার্টির সম্পর্ক নষ্ট করাই এই অপপ্রচারের লক্ষ্য। সম্পাদনা: ইকবাল খান